১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of global village)
Back to previous page>>
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of global village)
“গ্রাম” শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। গ্রামে সবাই মিলেমিশে একসাথে বসবাস করে। গ্রামে সবাই একেঅপরকে ভালোভাবে চিনতে পারে। সবাই সবার সুখ দুঃখে এগিয়ে যায়। গ্রামের কোথায় কলেজ, হাটবাজার,
রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি আছে তা সবারই জানা। গ্রামে কোথাও
কোনো অনুষ্ঠান বা কোনো ঘটনা ঘটলে সবাই মুহূর্তের মধ্যে
জানতে পারে। ঠিক তেমনই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা
ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে আজ সমগ্র পৃথিবী গ্রামের মতো ছোট
হয়ে আসছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা খুব সহজে তথ্য
আদান-প্রদান করতে পারি। যে কোনো বিষয়ে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ
করতে পারি, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি। পৃথিবীর
কোথায় কি ঘটছে কি বিষয়ে কে গবেষণা করছেন তা আমরা
জানতে পারি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উনড়বয়নের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশের মধ্যকার দূরত্ব অনেক কমেছে। আমরা যে কোনো দেশের
মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি। এজন্য বলা যায় যে, পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। এটি আমাদের
ব্যবসায় উন্ন তি এবং পারস্পারিক সম্পর্কের উন্ন তি ঘটায়। এটি প্রায় অসম্ভব ছিল যে, বাংলাদেশ থেকে
আমেরিকায় বসবাসকারি আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, কিš‧ এখন শুধু কথা নয়, যার সাথে কথা বলা
হচ্ছে তার সচল চিত্রও দেখা যায়। আমরা আগ্রহী হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোকদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে
তুলতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন সাধন করেছে। বর্তমানে যোগাযোগেরসবচেয়ে সহজ মাধ্যমগুলো হলো মোবাইল ফোন, ই-মেইল, টেলি কনফারেন্সিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, রেডিও,
টেলিভিশন ইত্যাদি। আগে মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি/পত্র। ডাক বিভাগের উপর আমাদের
নির্ভর করতে হতো। তখন একটি চিঠি পৌছাতে দেশের অভ্যন্তরে ৩ থেকে ৪ দিন এবং দেশের বাইরে চিঠি
পাঠানোর ক্ষেত্রে ৭ থেকে ১০ দিন বা তার চেয়েও বেশিদিন লাগতো। বিদেশে চিঠি পাঠানোর সময় নির্ভর করত
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিডিউলের উপর। কিন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কাগজ, কলম ব্যবহার
করে চিঠি লেখা অনেকেই ভুলে গেছে। ডাক বিভাগ অনেকটা অলসভাবেই সময় কাটাচ্ছে। এখন তথ্য আদানপ্রদানের
মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ই-মেইল। ই-মেইলের মাধ্যমে আমরা খুব সহজে অল্প খরচে অতি দ্রুত
যে কোনো সংবাদ একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণ করতে পারি। এক্ষেত্রে দেশ বা বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই সমান
সময় লাগে। অপেক্ষা করতে হয় না কোনো ফ্লাইট সিডিউলের। এক্ষেত্রে সময় এবং খরচ বাঁচে এবং পদ্ধতি
অত্যন্ত সহজ, এর জন্য দরকার শুধু একটি ইন্টারনেট সংযোগ।
তাছাড়া মোবাইল টেকনোলজির ফলে আমরা খুব সহজে, অল্প খরচে সরাসরি কারো সাথে কথা বলতে পারি।
ভিডিও কনফারেন্সিং এর সাহায্যে আমরা যার সাথে কথা বলি তাকে সরাসরি দেখতেও পারি। তাছাড়া রেডিও বা
টেলিভিশনের মাধ্যমে যেকোনো সংবাদ সহজে দেশ এবং বিশ্বের সকল মানুষের নিকট পৌছে দেয়া যায়। তাছাড়াও
যোগাযোগ ক্ষেত্রে আইসিটির একটি বড় ব্যবহার হলো বিভিন্ন যানবাহন যেমন-রেল, বিমান ইত্যাদির টিকেট
রিজার্ভেশন এর ফলে আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে রেলওয়ে এবং বিমানের টিকেট বুকিং করতে পারি। উপরের
আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, আইসিটি যোগাযোগ ক্ষেত্রে গতি এনেছে এবং খরচ অনেক কমিয়েছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশ এবং বিদেশে কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা দেশে এবং দেশের বাইরে কোথায় কোন ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে পারি এবং সে অনুযায়ী নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারি। বর্তমানে প্রায় সকল অফিস-আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। এর ফলে এ ফিল্ডের দক্ষ লোকের যেমন- প্রোগ্রামার, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এডমিনিস্ট্রেটর ইত্যাদি প্রয়োজন এবং এদের সাথে আরো অনেক সাপোর্টিং স্টাফ প্রয়োজন। এর ফলে অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের দেশে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে। এর ফলে অনেক বেকার যুবক/যুবতীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। দেশিবিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ/প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মী ক্সতরি করার জন্য অনেক ট্রেনিং স্কুল /সেন্টার গড়ে উঠেছে-যাতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। কিš‧ তাদের একটু যুযোপযোগী প্রশিক্ষণ দিলে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে এদের বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। আউট সোর্সিং হলো দেশে বসে অনলাইনের মাধ্যমে অন্যদেশের ক্লায়েন্টদের কাজ করিয়ে দিয়ে ক্সবদেশিক অর্থ উপার্জন করা। কাজগুলোর মধ্যে কম্পিউটার বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরী , ওয়েব ডিজাইন করা, ইমেজ এডিটরের কাজ। যারা একাজে জড়িত তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত ব্যবসায়ী বলা হয়।১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে একটি শক্তিশালী টুলস। ফরমাল এবং নন-ফরমাল উভয় পদ্ধতিতেইএটি অত্যন্ত কার্যকর। যে কোনো সময় এবং যে কোনো স্থানে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে আইসিটির বদৌলতে ।
কোনো শিক্ষার্থী দিনের যে কোনো সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সকল কোর্স সংক্রান্ত তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তাছাড়াও রেডিও এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে লেকচার ব্রডকাস্টিং করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা প্রচুর পরিমাণে কোর্স সম্পর্কীয় উপাত্ত এবং তথ্য পেয়ে থাকে। সুতরাং উভয়ের জন্য যে কোনো বিষয়ে গবেষণা সহজ হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার করছে। আইসিটি ব্যবহারের ফলে দেশের শিক্ষাবিদ বা এ বিষয়ে নীতি নির্ধারণে ব্যক্তিগণ বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রেণি, বয়স অনুযায়ী পাঠ্যক্রম, বিভিন্ন দেশে পরিচালিত গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম তৈরী করতে পারেন। শ্রেণিকক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করা যায়। গতানুগতিক লেখাপড়ার পদ্ধতির একটু পরিবর্তন করে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষাকে আরো আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। ক্লাসের পাঠের সাথে সংগতিপূর্ণ বিভিন্ন চিত্র, অডিও, ভিডিও ব্যবহার এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণমূলক ক্লাসের মাধ্যমে পাঠের বিষয়কে শিক্ষার্থীদের সামনে আরো সহজ, বোধগম্য করে তোলা হয়। এর জন্য কম্পিউটার এবং প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়। শিক্ষকরা তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের আপডেট রিচার্স/ গবেষণা সম্পর্কে ইন্টারনেট থেকে
প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। কোনো বিষয়ে গবেষণার জন্য আর লাইব্রেরির মধ্যে বসে থাকতে হয় না।
শুধু ইন্টারনেটে প্রবেশ করে উল্লেখিত/ প্রয়োজনীয় বিষয় লিখে সার্চ দিলেই বের হয়ে আসে শত শত প্রবন্ধ রচনা
বা বিভিন্ন ছবি। নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর অডিও এবং ভিডিও পাওয়া যায়। যা ব্যবহার করে শিক্ষকরা ডিজিটাল
কনটেন্ট তৈরী করতে পারে। শিক্ষকরা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লেকচার/ প্রবন্ধ/ অডিও/ ভিডিও নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে আপলোড করে রাখতে পারে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়েও ঐ লেকচার ডাউনলোড করতে পারে। বর্তমানে কিছু পরীক্ষাও অনলাইনের মাধ্যমে নেয়া হয়। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নেও তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, নৈর্ব্যত্তিক
পরীক্ষার উত্তর পত্র মূল্যায়ন এবং রচনামূলক অংশের নম্বর মিলকরণ, বিভিন্ন বিষয়ের গ্রেডিং করা এবং
জিপিএ নির্ণয় করা ইত্যাদি সকল কাজই প্রযুক্তি নির্ভর স্বয়ক্রিয়ভাবে প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন
পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলও ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের বড় বড়
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগ করে থিসিস পেপার তৈরী করা যায়। বিদেশের কোনো
বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করে এমফিল/ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়।
১.১.৪ চিকিৎসা (treatment)
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্নগবেষণা যা তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর তা আজ মানুষকে এনে দিয়েছে দীর্ঘ এবং সুন্দর জীবন। আইসিটি ব্যবহারের ফলে এক্সরে, আলট্রাসাউন্ড, এম আর আই প্রভৃতি প্রযুক্তির সুফল আমরা পেয়ে থাকি। নতুন ঔষধ আবিষ্কার এবং ঔষধ এর উন্নয়ন সাধনের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব এবং প্রযুক্তি ও ঔষধ দ্বারা ঐ সকল ত্রুটি সংশোধন করা সম্ভব। ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ব্যবহার করে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আজকাল টেলিফোন এর মাধ্যমেও জনগণ চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। হাসপাতালে রোগীদের পাল্স, তাপমাত্রা,শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তচাপ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে, রোগীর শরীর স্ক্যান,এবং রোগীদের রেকর্ড সংরক্ষণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। মূলকথা চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, রোগীর রেকর্ড, ওয়েব বেসড সাপোর্ট, যোগাযোগ ও গবেষণায় আইসিটি ব্যবহৃত হয়। ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে গ্রামের রোগীরা শহরের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শ পেতে পারে। আইসিটি ব্যবহার করে দেশের বাইরে ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ সম্ভব। অর্থাৎ ডাক্তার এবং রোগী দুই স্থানে থেকে পরামর্শ আদান-প্রদান করা সম্ভব। তাছাড়া এক্সপার্ট সিস্টেম ব্যবহার করেও আমরা চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ
পেয়ে থাকি।
No comments